গল্প

একটি আধা সত্য গল্প

Mar 06, 2013

সময় দুপুর ১২ টা  । আজ হরতাল ।   


ফেসবুক সেলিব্রেটি,


"কি আজব দেশ , হরতাল ডেকেছে রাজনীতিবিদরা, আর তা পালন করছে রিকশাওয়ালারা ।  ১৫ টাকার ভাড়া চায় ৩০ টাকা , তাদের গদামের উপর রাখুন । "


স্ট্যাটাসটা দিয়ে বাথরুমে গেছিলেন ফেসবুক সেলিব্রেটি জব্বার খান , ৫ মিনিটের মাথায় ১২৩৭ টা লাইক , কমেন্টস ২৩৩ টা , মেসেজগুলা চেক করলেন ১০৫ টা মেসেজ , বেশিরভাগইঃ 


- "ভাইয়া আপনাকে আমার খুব ভাল লাগে "


- "ভাইয়া আমার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করেন" 


- "ভাইয়া আপনার মাথায় এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমান কেমনে ??"


জব্বার খানের মাথা একটু গরম , মহিপুর থেকে তার হোস্টেলের ভাড়া ১৫ টাকা আর রিকশা ওয়ালা ২০ টাকা চেয়েছিল , কত্তো বড় সাহস ,তাই কানের নিচে একটা লাগাই দিছে জব্বার খান । 

তার ধারনা, এই সব বস্তিতে বসবাসকারি মানুষজন টাকা মেরে  খাইতে চায় , ফেসবুকে পাবলিক ভ্যালু কম দিবে দেখে ২০ টাকার যায়গাতে ৩০ টাকা কথা লিখছে । 

এরই মধ্যে মিস সঞ্চিতা অনলাইনে আসছে , জব্বার খানের মনটা ভালো হয়ে গেল ...



রহিম মিয়া থাপ্পড় খেয়ে রিকশা চালাইতে লাগলেন , মহিপুর থেকে রিকশা চালায়া বসন্তপুর গেলেন , শরীরটা তার ভাল না ।

 জন্ডিস হইছে , ডাক্তার বলেছিল শুয়ে খাকতে , শুয়ে থাকলে পেট চলবে না তাই,  রিকশা নিয়ে বের হয়েছিল ,

 বাড়িতে পোয়াতি বউ আছে , বৃদ্ধ বাবা আছে  বাসায় ।  চড় খাওয়ার পর তাঁর মাথাটা কেমন জানি করতেছে, ডেইলি ২-৩ টা খেতে হয় ।

 আজ একটু বেশিই জোরে মেরেছেন ভদ্রলোকে, তাই মাঝে মাঝে চোখে ঝাপসা দেখতেছে রাস্তা ,

 আজকে মাত্র ৩০ টাকা ইনকাম করছে। ৮০ টাকা রিকশার মালিকরে দেওয়া লাগবে ,

 শফিপুরের দিকে তিনি রিকশা নিয়ে যাইতে লাগলেন । একটা যাত্রী পেয়েছেন 

 যেতে যেতেই  হঠাত্‍ বিকট আওয়াজ শুনলো রহিম মিয়া , ভয়ে রিকশা টা জোরে জোরে টানতে যেয়ে, মাথা ঘুরিয়ে রিকশা উল্টিয়ে যাত্রী নিয়ে পাশের ড্রেনে পড়ে গেলেন রহিম মিয়া ।


দুপুর ২ টা । 


আব্দুল মজিদ মিয়ার মনটা খুব ভালো , তার ছেলে আমেরিকাতে ব্যরিস্টারী পাশ দিয়ে সিটিজেনশিপ পেয়েছে । 

উনারাও এখন আমেরিকা যাইতে পারবেন । কাজের মেয়েটা চা দিয়ে গেছে , চা খাচ্ছেন তিনি । চা খেতে খেতে আরেকটা ভালো খবর পেলেন তিনি ,

তিনি ভাবলেন, সকালে কার মুখ দেখে উঠছেন সেট তাঁর জানা লাগবো , প্রতিদিন তার মুখ দেখেই উঠতে হবে ।

সংবাদটি হলঃ 


"একটা রিকশা ওয়ালা শফিপুরের আহত হয়েছে ।"



রাত ৯ টা ।  


জব্বার খান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন ,


"আগামী তিন দিন হরতাল ডেকেছেন মজিদ মিয়া, 

রিক্সা চালক রহিম মিয়ার জন্য খারাপ লাগছে , 

এভাবে আর কত গরিব মানুষ তার জীবন হারাবে । 

আসেন রহিম মিয়ার জন্য নামায পড়ে, আল্লাহর কাছে দুয়া করি  । 

এই বুর্জোয়া সমাজে রিকশা চালকদের কোন স্থান দেয় না কেউ,

 আসেন ভালবেসে গরীবদের মুখে তুলে দেয়, এক বেলা খাবার । "


এরপরে সিগারেটে একটা টান দিয়ে জব্বার খান তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে লাগলেন ...




রাত ১১ টা ।

এক পা ভেঙ্গে গেছে রহিম মিয়ার , 

মাহির নামে একটা ছেলে রহিম মিয়াকে হাসপাতালে নিয়েছে ,

 হাসপাতাল থেকে সিএনজি ভাড়া করে আনছে , 

সব টাকা সেই দিয়েছে , রাত বাজে ১১ টা । সরকারি মেডিকেলের প্লাস্টার শেষে, মাহির তার পকেট থেকে ২০০ টাকা রহিম মিয়ার বুড়া বাপ কে দিয়ে রাস্তায় নেমে গেলো ...


ল্যাম্পপোস্টের আলোতে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো ...


"আব্বু, বিকাশে ১০০০ টাকা পাঠিয়েছিলো সপ্তাহ চালানোর জন্যে,  সবতো খরচ হলো রহিম মিয়ার পিছে , সারা চলবে কিভাবে সে? "


এই দিকে রহিম মিয়া ও তার বাবা আফসোস  করতেছে ঘরে, ছেলেটার নাম তাদের জানা হয়নি ।



 

৩ দিনের হরতাল শেষ হইছে ।


রহিম মিয়ার জন্য ওষুধ কিনতে হবে , রাস্তায় রিকশা নিয়ে নামলেন রহিম মিয়ার বুড়া বাপ , ৬০ বছর বয়সে চোখে দেখেন না ,কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে ।

 রাস্তায় চলছে রহিম মিয়ার বুড়া বাপের রিকশা । 

আল্লাহর তৈরি সূর্য লাল হয়ে আকাশে উঠে , আবার লাল হয়ে ডুবে যায় । 

এর মাঝে কেউ এসিতে বসে কম্পিউটার টিপে , কেউ রিকশা চালায় আবার মাহিরের মতো ছেলেটি স্টলে বসে গল্প করে ,মাহিরের যখন চা খাওয়ার টাকা থাকে না , 

চাওয়ালা মামারা বাকিতে তাকে চা দেয় ।


জীবন চলে এবং এভাবেই চলতেই থাকবে ।


মুখবন্ধ -কাল্পনিক গল্প । কোন কিছুর সাথে মিলে, খুজলে নিজ দায়িত্বে খুজবেন ।

Powered by Froala Editor