গল্প

২ লাখো মা-বনের ইজ্জত ও ব্যবসা পাগল এক জাতির গল্প ।

Jul 19, 2013

ঝিগাতলার কাঁচা বাজারের গলিতে ছোট একটা দোতালার বারান্দাতে বসে আছে নবনিতা । বাড়িটি কিছু দিন আগে রং করে হয়েছে।কাঁচা রঙের গন্ধ এখনো নাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছে।গ্রিলের উপরে হাত রেখে বাহিরে বৃষ্টি দেখছিল নবনিতা।কারেন্ট চলে গেছে।বড় দেয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দ এখনো মাঝে মাঝে বৃষ্টির শব্দ কে হার মানিয়ে কানে আসছে।বিকেল গড়িয়ে এখন গোধূলি আসন্ন । চারিদিকে সুধু বৃষ্টির শব্দ । বাড়িতে কেও নেই,ছোট গলির ভিতরে কয়েকটা ছেলে-মেয়ে বাতাবি লেবু (জাম্বুরা) তা লাথালাথি করছে।কয়েক দিন আগে ম্যারাডোনা ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে,সেই উত্তেজনা এখনো কাটেনি । গ্রিলের উপরে রেখে হাত দুইটা ভিজে গেছে বৃষ্টির পানিতে । সাবধানে নবনিতা রাখল তার পেটে । নতুন মানুষ আসছে তাদের সংসারে । মাস দুয়েক পর আরেকটি মানুষের কান্না শুনা যাবে । নবনিতা চোখ বন্ধ করলে দেখতে পায় ছেলেটিকে,নাদুস নুদুস দোস্ত ছেলে।হুম,নবনির মন বলছে তার ছেলে হবে।ছেলেটার নাম রাখবে সে নোমান.নোমানের গাল দুইটিতে আস্তে করে টান দিল নবনিতা চোখ বন্ধ করে,নোমান হাসছে,খিল খিল করে দাঁত বের করে হাসছে .নোমানের বাবা এরশাদ দৈনিক যাযাবর পত্রিকার সাংবাদিক, একটু পরেই বাড়িতে ফিরবে.নিচের তলার ভাড়াটিয়ার পেটে বাচ্চা আসলে সে তার মায়ের বাড়ি চাঁদপুরে চলে গিয়েছিল,৭ কিনবা ৮ মাস পর ৩ মাসের বাচ্চা নিয়ে সে  বাড়িতে ফিরে.নবনিতার যাবার জায়গা নাই,এমন কি এরশাদেরও নেই.তাদের দুই জনের শুধু টারা দুইজনই আছে.নবনিতা যুদ্ধ শিশু । বড় হয়েছে এতিমখানাতে । বাবা-মা কে তো চিনার প্রশ্ন উঠে না । এরশাদের বাবা-মা সম্পর্কে নবনি জিজ্ঞেস করে না । এতিমের ব্যাথা এতিম তার চোখে তাকালেই বুঝতে পারে,ওই ব্যাথা নাই কোনো ছলনা । ঠান্ডা লেগে যাবে,বৃষ্টি আর জোরে আসছে । সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে । শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে ছোট লাইট জালালো ।নাহ,কারেন্ট এখনো আসেনি।লাইট চারিদিকে ছড়িয়ে পড়াতে দেয়ালে বড় করে টাঙ্গানো একটা ছবি চোখে পড়লো নবনিতার। ছোট এরশাদকে কোলে করে রেখেছে তার মা, বাবা মায়ের মুখে হাসি । গতকাল কাজের মেয়েটা ঘর পরিষ্কার করার সময় একটা ডাইরী পেয়েছে নবনিতা । এরশাদের ডাইরী,কয়েক বছর আগের । টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে ডাইরীটা খুলল নবনিতা । বাহিরে তখন বৃষ্টি হচ্ছে । রেডিতে বাজছে দেশের গান ।

প্রথম বাংলা দেশ,আমার শেষ বাংলাদেশ।

 "সেই দিনটির কথা আমার এখনো মনে আছে । কত আর বয়স ছিল আমার,৮ বছর,মায়ের সাথে শুয়ে ছিলাম বিছানাতে । আব্বু তখন বাহিরে । আব্বু পাকিস্তান পুলিশের চাকরি করতেন ।প্রবল গোলাগুলির শব্দে যখন ঘুম ভাঙে,আমি দেখি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার মা কাঁপছে । দেয়ালে হেলান দিয়ে,আমার মনে আছে ২৬ এ মার্চ আমার জন্মদিন ছিল,আব্বু কে তাই একটা বিমান আনতে বলেছিলাম । আব্বু বলেছিল সকালে ঘুম ভেঙ্গে বিমান দেখতে পারবে । আমাকে জড়িয়ে ধরে আম্মু কেনো কাঁপছিল তা বুঝতে একটু সময় লাগলেও গুলির অবিরাম শব্দ ঠিক্‌ই শুনতে পাচ্ছিলাম । ভয়ে আমিও আম্মু কে জড়িয়ে ধরি । দুই মা-ব্যাটা  জড়িয়ে ধরে রাতটা কাটানোর পর দুই তিন দিন ওই বাড়িতে থেকে ছিলাম । আব্বু ফিরে নি । মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নানা বাড়ির দিকে যাতে থাকি । কিন্তূ পারিনি,পাদ্মা পার হওয়ার সময় ধরে পড়ি আমরা ।

মাহমুদ খালুকে গুলি করে জুলেখা খালা ও আমার আম্মু কে যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো পাকিস্তানি সেনারা তখন আমি ছোট মানুষ বাধা দিতে গেলে,রাইফেলের আগা দিয়ে মাথায় আঘাত করে তারা । আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন রাত । আমার চিৎকার তখন কেও শুনতে পাইনি । কেও শুনেনি।"

হঠাৎ করে দরজা থেকে ঠক ঠক শুনলো আওয়াজ শুনলো নবনিতা , ডাইরিটা লুকিয়ে দরজা খুলল । কাক ভেজা হয়ে এরশাদ এসেছে বাসায় । তখনো বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।

এরশাদ দঔলোদিয়া তা যাচ্ছে । পতিতার উপর সে একটা আর্টিকেল লিখবে।দঔলোদিয়া  বাংলাদেশের সর্ব বৃহত্‌  পতিতালয় । প্রতিটা ঘরে মেয়েরা আছে । প্রতিটা ঘর প্রায় খুলায় , পাতলা চাদর দেয়া । ভিতরের চৌকির শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে । মেয়ে গুলার চিৎকার শুনতে পাওয়া যাচ্ছে । ঘন্টা দুয়েক খবর নিয়ে এরশাদ  পতিতাদের মাথা এক বৃদ্ধ মহিলার কাছে গেল । মহিলার দিকে তাকাতেই এরশাদের মনে হলো ওই মহিলা কে সে চিনে,ওই মহিলার ছবি, এরশাদের ঘরে বড় করে টাঙ্গানো আছে । ওই মহিলার কোলেতে ছোট এরশাদ ছিলো ।


 ২ লাখো মা-বনের ইজ্জত ও ব্যবসা পাগল এক জাতির শীর্ষক এরশাদের আর্টিকেল পুলিৎজার পুরষ্কার পেয়েছে।

পুরষ্কার নেয়ার সময় টাতে এরশাদেরর বলা কিছু কথা ।

"যার যাই,আসলে তারই আখেরি যাই । দেশ বা জাতির টাকে কিছু দিতে পারেনা।দেশের জন্যে অথবা জাতির  জন্যে গিয়েছে ওটাই তার সান্তনা থাকে । আমাদের পাঠ্য বয়ে ১৯৭১ সালে ২ লাখো ধর্ষিত নারী কে নিয়ে অনেক বড় বড় কথা লিখা থাকলে বাস্তব তা না । ২ লাখো মা-বোন আমাদের রাজনীতিবিদের ভোট পাওওয়ার হাতিয়ার । একটা বীরাঙ্গনা নারী যখন কারো পাশে দাড়াই তখন তাকে তারা জায়গা ছেড়ে দেয় ।তারা তাকে এ জন্যে জায়গা দেই না যা তারা তাকে সম্মান করে,বাস্তবের ঘটনা হলো তারা জায়গা ছাড়ে যেন তাদের গাঁয়ে স্পর্শ না হয় বীরাঙ্গনার , অনেকে আছে বুকে জড়িয়ে রাখে কিন্তূ বাসায় যেয়ে সাবান দিয়ে পারলে চামড়া তুলে ফেলে নিজের গাঁয়ের । কত বীরাঙ্গনা নারী যুদ্ধের পর নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি ঘৃণাই, কত মানুষ তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে পতিতালয়ে । যাই জাতি সম্মান দিতে পারে না,তার কপালে সুখ নাই।সুখ কখনো আসতে পারে না । উপরে যদি কেও থেকে থাকে তো তিনি সুখ দিবেন না।"


Powered by Froala Editor