রিভিউ

DIBRATRIR KABYA BY MANIK BANDOPADHYAY

Jun 13, 2013

দিবারাত্রির কাব্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত তুমুল জনপ্রিয় এবং আলোচিত উপন্যাস । বঙ্গশ্রি পত্রিকাতে একটি সন্ধ্যা, রাত্রি এবং শেষ পর্যন্ত দিবারাত্রির কাব্য হিসেবে প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালে । ১৯৩৫ সালে দিবারাত্রির কাব্য মলাটে প্রকাশিত হয় এটি ।
আমরা সাধারনত যে উপন্যাস পড়ি তা থেকে সম্পুর্ণ আলাদা “দিবারাত্রির কাব্য “।

এ সম্পর্কে মানিক বলেন -
“এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়,
এটি রুপকের আরেক রুপ ।”


এ কথা উনুসারে আমরা বলতে পারি
এটি উপন্যাসও নয় রুপকও নয়,
এটি উপন্যাসের আরেক রুপ ।

দিবারাত্রির কাব্য অবশ্যই প্রেমের উপন্যাস । তবে কি ধরনের প্রেমের উপন্যাস তা বোঝা মুশকিল । অনেকে এটিকে এন্টি প্রেমের উপন্যাস বললেও আসলে যে এটি কি তা বধয় আল্লাহ মাবুদই ভাল জানে । অনেকে শ্রেষ্ঠ কাব্যধর্মী উপন্যাস হিসেবে রবিন্দ্রনাথের “শেষের কবিতা” বললেও আমার মতে বাংলা সাহিত্তের শ্রেষ্ঠ কাব্যধর্মী উপন্যাস দিবারাত্রির কাব্য ।
“মানুষের মৃত্যু কবলিত জীবন যেমন সার্থক তেমনি সার্থকতা ভালবাসাময় ক্ষণজীবি জীবনেও আছে ।”

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হেরম্ভ । প্রচন্ড পাষান এবং বিশ্লেষন ধর্মী মানুষ ,যে জীবনে প্রতিটি মুহর্তকে বিশ্লেষন করে চলে,সে আমাদের দুনিয়ার মানুষ নয়,তার দেহ এখানে থাকলেও সে বাস করে অন্য জগতে,সেখানে শুধুই বিশ্লেষন আর বিশ্লেষন । জগতের প্রেম ভালবাসা আসলে তার কাছে বিশ্লেষনের জিনিষ,উপন্যাসে হেরম্ভের জীবনে ৩টি মেয়ে আসে এবং হেরম্ভের ভালবাসা সম্পর্কে মানিক বলেন -

“হেরম্ভ আসলে ভালবাসে সর্বস্ব উজাড় করেই ভালবাসে । প্রেমও অপ্রেমের দোলাচলে দুলে,কাওকে পাওয়ার জন্যে নয় অথবা হয়তো সে কাওকে সত্যি কারে ভালবাসে না। সে ভালবাসে ,ভালবাসার মাদ্ধমে নিজের হৃদয়কে আত্তবিশ্লেষন করে । 

হেরম্ভের জীবনের তিনটি মেয়ে উমা,সুপ্রিয়া এবং আনন্দ । উপন্যসের প্রথম ভাগ “দিনের কবিতা” । উপন্যাসের শুরু হয় দারোগা অশোকের স্ত্রী সুপ্রিয়ার বাড়িতে । হেরম্ভ তার প্রাক্তন প্রেমিকা সুপ্রিয়ার রুপায়কুড়ার বাড়িতে বেড়াতে যায় । ৫ বছর পর হেরম্ভ দেখা করতে আসে তার সাথে । হেরম্ভ নিজেই তার প্রাক্তন প্রেমিকার বিয়ে দিয়েছিল । উপন্যাসে দেখা যায় হেরম্ভকে সুপ্রিয়া তার দেহ মন সব কিছু দিয়ে দিলেও তা নিতে অস্বীকার করে হেরম্ভ । রাতের আধারে প্রেমের প্রস্তাবও তাই ফিরিরে দেয় ৬ মাসের সময় চেয়ে । উমা হেরম্ভের স্ত্রী । এক সন্তান রেখে আত্যহত্যা করে সে ।উপন্যাসের কথাও তার মৃত্যু নিয়ে তেমন কিছু বলা নেয় । সুপ্রিয়ার ধারনা ছিল হেরম্ভ সুপ্রিয়াকে ভালবাসে বলে উমা আত্যহত্যা করেছে কিন্তু হেরম্ভ তাকে সাফ জানিয়ে দেয় তার ধারনা ভুল । তার মৃত্যু সম্পর্কে সুপ্রিয়ার একটি উদ্ধিতি দেয়া যায় ।

আজ বুঝলাম আপনার স্ত্রী আত্যহত্যা করেছে কেন ? আপনি মেয়ে মানুষের সর্বনাশ করেন ঠিকই কিন্তু তার দায়িত্ত নেয়ার সময় হলেই জান এড়িয়ে ।
হেরম্ভের তৃতীয় প্রেমিকা আনন্দ এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে হেরম্ভ বলে

“সংসারে কত পরিচিত লোক আত্তিয় থাকে যারা হতাত করে আমাদের ছেড়ে চলে যায় । বেচে থাকার সময় আমাদের কাছে তাদের যতটুকু দাম ছিল কেবল নেয় বলেই তাদের দাম বাড়িয়ে দেয়া ঠিক নয় । দিলে মরনকে আমরা ভয় করতে আরম্ভ করব,আমাদের হৃদয়ে মৃত্যুর ছায়া পড়বে,আম্রা দুর্বল অসুস্থ হয়ে পড়ব ।”

হেরম্ভ মানুষের জীবনের সাথে যুক্ত হতে পারেনা । মানুষের সম্পর্ককে সে কেবল বিশ্লেষন করে । তাই মৃত নারী উমা উপন্যাসে না থেকেও হেরম্ভের চরিত্র বর্ণনা করে দেয় ।
আনন্দ

হেরম্ভের জীবনে সব কিছু উলটপালট করে দেয় আনন্দ নামের মেয়েটি ।প্রথম দর্শনেয় প্রেমে পড়ে যায় হেরম্ভ । সকল আত্যবিশ্লেষন সে ভুলে যায় । অন্য পৃথিবীর মানুষ হেরম্ভ আমাদের মত সাধারন মানুষ হয়ে যায় ।

মানিক বলেন -

“সুপ্রিয়াকে ত্যাগ করে হেরম্ভর যা হয়নি তা এখন হল ।
নিজের কাছে নিজের মুল্য অসম্ভব রুপে বেড়ে গেল ।
তার মনের ভাষার মত স্পস্ট হয়ে এ ভাষা জেগে উঠেছে,আনন্দ যেন চলে যাবার আগে আর একবার তার চোখের দিকে তাকায় ।”

তিনি আরও বলেন -
“এতকাল যে হেরম্ভ জিবনের বিশ্লেষন ছাড়া থাকতে পারেনি সে আনন্দের সংস্পরশে এসে জিবনে প্রবেশ করেছে । প্রেম হেরম্ভ উপলব্ধি করছে না,অনুভব করছে না,সে প্রেম করছে ।”
তাদের ভালবাসার প্রকটতা বুঝাতে মানিক বলেন,
তাদের কথা বলা অর্থহীন,চুপ করে থাকা ভয়ঙ্কর ।
পরস্পরের উনুচ্চারিত শব্দকে তারা শুনতে পায়,
তাদের কত প্রশ্ন ভাষার রুপ না পেয়ে,
নিশব্দ জবাব পাচ্ছে ।

এভাবেই দ্বিতীয় ভাগ “রাতের কবিতা “ শেষ হয় ।
উপন্যাসের তৃতীয় ভাগে আবারও হেরম্ভ আত্যবিশ্লেষনী ।
প্রেমিক হেরম্ভ আবারও জগত কে আত্যবিশ্লেষন শুরু করে ।
তাই মানিক উপন্যাসের শেষের দিকে বলেন -

হেরম্ভের বুক হিম হয়ে আসে,
কোথায় সেই প্রেম ?
পুর্নিমার এক সন্ধায় যা সৃস্টি হয়েছিল ।
আজ রাত্রির জন্য সে অপারথিব চেতনার এতটুকু ফিরে পেত ।



তাই তো হেরম্ভ জীবন্ত আনন্দকে আগুনে পুড়ে যেতে দেখে চুপ করে থাকে,মানিকের মতে -
“হেরম্ভ নিশ্চল হয়ে তাকিয়ে রইল ।কিছু করার নেই।আনন্দ অনেক আগে মারা গেছে । শুধু চিতায় উঠবার শক্তি টুকু বজায় ছিল ।”
এভাবেই তৃতীয় ভাগ দিবারাত্তির কাব্য শেষ হয় ।

এভাবেই উপন্যাসেরর শুরু যেখানে হয়েছিল ,শেষও হয় সেখানে ।

মুখবন্ধ - অদ্ভুত একটি উপন্যাস । এটি আসলে পড়ে বুঝাও মুশকিল আর রিভিউ তো দুরের কথা ।