জীবন-কথন

গন্ধরাজে প্রেতাত্মা ,বিহাইন্ড দ্যা সিন,হন্টেড ৩০১ । RS-36,TARC

Nov 06, 2014

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রত্যেক ছাত্রকে তাঁর চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন জীবনের ৩টি মাস (ব্র্যাকের হিসেবে একটি সেমিস্টার) সাভারে অবস্থিত ব্র্যাকের ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। পূর্বে এই জায়গাটিতে শিক্ষকদের ট্রেইনিং দেয়া হলেও বর্তমানে এখানে ছাত্রদের ট্রেইনিং দেয়া হয়। এই তিন মাস সময়কে আগে TARC বলা হলেও বর্তমানে RS বলা হয়ে থাকে । আমার জীবনে টার্কে থাকা সময়কে নিয়েই আজকের RS -36 (TARC) জীবনের পাতা থেকে এর তৃতীয় পর্ব গন্ধরাজে প্রেতাত্মা ,বিহাইন্ড দ্যা সিন,হন্টেড ৩০১

গন্ধরাজে প্রেতাত্মার গল্প শুরু হয়েছিল আজ থেকে কয়েক মাস আগে । ২০১৪ সালের মে মাসে তে,৩০১ নম্বর রুমে । গন্ধরাজের আগে থেকেই সমগ্র ব্র্যাক ছাত্রদের কাছে দূর্নাম ছিল ভূত বা জ্বীনের জন্যে । আমি টার্কে যাওয়ার সময় শুনেছিলাম, এক মেয়ে নাকি গন্ধরাজের ছাঁদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে,সন্ধার পরে নাকি নানা কিছু দেখা যায় গন্ধরাজে,যায় হোক টার্ক নিয়ে আমার লিখা, অন্য লিখা গুলা পড়লে বিষয়গুলি আরও পরিষ্কার হবে ।

স্মৃতি কথনের শুরুতেই প্রথমেই গন্ধরাজের বর্ণনা দিয়ে নেয়, টার্কের পশ্চিম পাশের বাউন্ডারি সীমানার একদম কিনারা ঘেষা ডর্ম(হোস্টেল) হল গন্ধরাজ । সাদা রঙের ছয়তলা বিল্ডিং (সবার নিচে ছবি দেয়া হল) । টার্কে এর চেয়ে উঁচু আর কোন বিল্ডিং নেয় । গন্ধরাজের উত্তরের দিকে তাকালে কিছু সংখ্যক ঘর-বাড়ি দেখা যায়,ছোট ছোট গ্রাম্য এলাকার ঘর-বাড়ি । ঐ পাশেই টার্কের বাউন্ডারির সীমানা ঘেঁষে গোলাপ ক্ষেত রয়েছে একটি । সকালে ঘুম থেকে উঠে গোলাপের ক্ষেত দেখতে ভালোই লাগতো আমার । গন্ধরাজের পূর্ব দিকে একটি ছোট মাঠ রয়েছে (দুরন্ত),মাঠে রয়েছে ভলিবল খেলার কোর্ট,বাস্কেটবল খেলার কোর্ট,ক্রিকেট ফুটবলও খেলে যায় ছোট পরিসরে । মাঠের পাশে আনন্দপুর (টার্কের ক্যাফে :P) । গন্ধরাজের দক্ষিণের দিকে রয়েছে আরও একটি মাঠ(দূর্বার),ছোট একটি লন্ড্রী । আর গন্ধরাজের পশ্চিমটা আসলেই সুন্দর । একটা পুকুর আছে ( টার্কের সীমানার বাহিরে) ,কিছু দূরে ছোট খাট জঙ্গল দেখা যায় ।। মাঝে মাঝে শিয়ালের ডাক গন্ধরাজে বসে পাওয়া যেত ,সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ।

ফিরে আসি আজকের মূল স্মৃতি কথায়,গন্ধরাজের তৃতীয় তলায় আমার রুমে আমি যখন প্রথম প্রবেশ করি তখন দেখি দুইটি বিছানা দখল ,মানে আমার রুমমেটরা এসে গেছে আমার আগেই । অবশ্য তারা তখন কেউই ছিল না রুমে ,আমি আমার ব্যাগ রেখে নিচে নেমে যায় । আমার রুমমেটদের মাঝে আমি আগে থেকে একজন কে চিনতাম । শ্রাবন ,সে টার্কে পরিচিত হয় আকিব নামে (:P) ।

শ্রাবণ অরফে আকিব আমার আজকের স্মৃতিকথনের মূল চরিত্র । আমার আরেক রুমমেটের নাম অর্ণব । অর্ণবের ভাষায় “দোস্ত যখন রুমে এসে ঢুকছি দেখি পোলায়(শ্রাবণ) বসে আছে খাটের উপরে আর মিচকি মিচকি হাসে ,আমি ভাবলাম খুব ম্যচিউর পোলা সম্ভবত । তয় এখন আমি কি দেখতাছি । :P ”

ধীরে ধীরে টার্ক জীবন শুরু হয় ,একজন আরেকজনকে চিনতে থাকি , তৃতীয় তলায় রেগুলার আড্ডা হওয়া শুরু হয় । তৃতীয়তলায় আমি ,শ্রাবণ,অর্ণব সাথে ৩০৩ নম্বর রুমের সতির্থ(গন্ধরাজ ছেলেব্রেটি :P), আলিফ ,আলভী । আর ৩০২ এর সৈকত(টার্কের ফুটুগ্রাফার) । ফার্স্ট ফ্লোরের ফাহিম(উগান্ডা), সাথে MM(ওয়াদুদ) আর দ্বিতীয় তলার শুভ । মোটামোটি টার্কের জীবনের আড্ডা দেওয়ার মানুষ । যাদের নাম বলছি তাদের সবারই একটা কমন মিল রয়েছে ,উনিভার্সাল রেলেশনশিপ । পরিবারের লোকজনের পড়তে পারে এই লিখা তাই আর বিস্তারিত বললাম নাহ ।

আরেকজন আছে আমাদের আড্ডায়,নাম তাঁর রেদোয়ান ।

একদিন আমি,অর্নব আর শ্রাবণ মিলে ল্যাপটপে সিনেমা দেখছি, হটাৎ দরজায় আওয়াজ হওয়া শুরু করে ,আসলেই অদ্ভুত । ঠিক আওয়াজও না ,আঁচড় কাটার দাগ , এরকম শব্দ আমি জীবনেও শুনিনি । একটা নির্দিষ্ট বিরতিতে । টার্কে তখনও আমরা নতুন । রাত একটার পরে সব লাইট অফ করে দিতে হয় ,তাই আমরা লাইট অফ করে সিনেমা দেখছিলাম । অনেক্ষকন শব্দ হতে থাকে,তারপরে থেমে যায় । তার কিছুক্ষন পরে সতির্থ,ফাহিম,সৈকত,MM ,আলভি,আলিফ রুমে ঢুকে আমাদের এবং জানায় যে তাঁদের রুমে কে জানি আওয়াজ করছে ।

আমরা তো অবাক ,তারা আরও জানায় যে সবার রুমের সামনে কে জানি পানি ঢেলেছে । আমরা দেখলাম আমাদের রুমের সামনেও পানি । আমি অবাক হয়ে সবার দিকে একবার করে তাকাচ্ছি ,হটাৎ অর্ণব বলে উঠলো আজকে নাইট গার্ডরা নেই কেন ? আমরা সবাই একে একে জানালা দিয়ে তাকিয়ে খুজছিলাম রাতের নাইট গার্ডদের দেখার জন্যে । (গার্ডরা রাত ১২ টার পরে সারা রাত বাঁশি বাজাতো ।) অদ্ভুত হলেও সত্য কোন গার্ড ছিল না মাঠের আসে পাশে ঐ দিন । কিন্তু বাঁশির শব্দ শোনা যাচ্ছিল ।

অর্ণব বলেই বসল ভূত অথবা প্রেত এই শব্দ করতেছে । নাইট গার্ডেরা যে দূরে অন্য ডোর্মের কাছে থেকে বাঁশি বাজাতে পারে তা আমার মাথায় আসে নি তখন । কিছুক্ষন পরে শ্রাবণ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো এবং চিৎকার দিয়ে বেডে বসে পড়ে এবং বলে আনন্দপুরে কে জানি বসে আছে ,শুধু ছায়া দেখা যাচ্ছে এবং নড়তেছে । সবাই আনন্দপুরের দিয়ে তাকিয়ে সম্মতি জানায় যে আনন্দপুরে কেউ একজন বসে আছে । আমি দেখতে এসেছিলাম সবার শেষে,আমি তাকিয়ে তাকিয়ে খুজি কোথায় ছায়া বসে আছে ঐ ছায়া ?? সবাই আমাকে দেখানোর চেষ্টা করছে আনন্দপুরে বসে আছে । কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি না । হটাৎ শ্রাবণ বিছানা থেকে উঠে এসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বলে “আইতাছে ,আইতাছে ,এই দিকে আইতাছে,ও আল্লাহ ” । বলেই আবার বিছানায় ছুটে যেয়ে কাপাকাপি শুরু । আমি পড়লাম মহা সমস্যায় ,ছোট বেলায় শুনেছিলাম সবাই নাকি জ্বিন প্রেত দেখতে পাই না । আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম নাহ ,ওরা আসলেই কিছু দেখছে না ওরা সবাই মিলে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে ।

আমি বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসি একপর্যায়ে ,এসে দেখি সতির্থ হাটাহাটি করছে করিডরে । আমি যেয়েই ধরলাম আসলে কি হচ্ছে ?? সতির্থ আমাক বলে যে সবাই মিলে শ্রাবণকে ভূতের ভয় দেখানো হচ্ছে । তখন মনে পড়ে যে অর্ণবের মোবাইলে সিনেমা দেখার সময় ফোন এসেছিল,পানির মত পরিষ্কার হয়ে যায় সব কিছু । আমি আর সতির্থ তারপরে কিছুক্ষন গল্প গুজব করি,হাসাহাসি করি এটা নিয়ে । হটাৎ সতির্থ আমাকে বলেছিল “শোন যেয়ে বলবি যে সতির্থের কি জানি হইছে ,৫ ১০ মিনিট পরে আসবি শ্রাবণকে নিয়ে আমার রুমে । ”

আমিও তখন মজা পাওয়া শুরু করেছি ,আমিও আমার রুমে হাজির । এসে দেখি তখনো সবাই মিলে তখনো ছায়া খোজা চলছে ,ছায়া নাকি বাস্কেটবল কোর্টের পাশের গর্তে ভিতরে হারিয়ে গেছে । (কন্সট্রাকশন চলছিল তখন বাস্কেটবল কোর্টের) । আমি বসে বসে তাঁদের কথা শুনি । মোটামুটি মিনিট সাতেক পরে আমি আবার বের হয় এবং সতির্থকে ইশারা দিয়ে রুমে আসি এবং বলি সতির্থের কি জানি হইছে । শ্রাবণ সহ সবাই মিলে দৌড়ে সতির্থের রুমে যেয়ে সবাই অবাক ,আমিও অবাক । সতির্থ একটা গামছা পরে খাটে বসে বসে উলটা পালটা শব্দ করছে ,আর লাল রঙের ডিম লাইট ব্যপারটা আরও ভুতুড়ে করে দিয়েছিল । গামছা পড়াটা সবচেয়ে অবাক করার মত ,একটা বক্সার যতটুকু হয় গামছা দিয়ে ঠিক ততটুকুয় ঢেকেছিল সতির্থ । আর আজে বাজে কথা বলা তো চলছিলই । কিছুক্ষণ এরকম করে হটাৎ বিছানা থেকে নেমে প্যান্ট পরে লাইট জ্বালিয়ে আমাদের দেখে সতির্থ বলে বসল “কি হইছেরে তোদের? সবাই মিলে এখানে কি করতাছোছ ??” (এতক্ষন যেন আমাদের দেখেই নাই ।:P)

পাগলের মত শ্রাবণ আবার রুমে আসলো আসলো ভয় পেয়ে এবং বলা শুরু করলো জ্বিন ধরছিল সতির্থকে । শ্রাবণের ভয় পাওয়া বৃদ্ধির হার আমাদের মজা পাওয়ার হারের সমানুপাতিক । :) । আগের মত সবাই আবার ভয় পাওয়ার অভিনয় শুরু করলো,এই দিক দিয়ে MM ভূতের গল্প আরম্ভ করছে । আমি চিন্তা করে মশারী টাঙ্গিয়ে শুয়ে পড়লাম । ভাবতাছি কি করা যায় ,হটাৎ করে কি মনে হয়েছিল জানিনা হাত উঁচু করে রাখলাম । মিনিট দুয়েক উঁচু করে রাখার পরেও যখন কেউ আমার দিকে তাকায়নি ,আমি মুনে মনে গালিগালাজ আরম্ভ করে দিছি । আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্যে ডান হাত উচু রেকে বাম হাতে কয়েকটা বাড়ি দিলাম বিছানাতে । সবাই আমার দিকে তাকালো অবশেষে :P । আমি হাত উঁচু করে আছি মশারির মধ্যে,আছিতো আছিই । অরাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই । কিছুক্ষন পরে আর হাত উঁচু করে রাখতে পারি না । হাত ব্যাথা হয়ে গেছে । এখন কিভাবে নামায় হাত ??

শুরু করলাম বাম হাত দিয়ে ডান হাত টানা টানি । নিজের কাজ কর্মে নিজেরই হাসি আসতাছিল,শুনলাম শ্রাবণ বলছে “জ্বিন ছেড়ে যাচ্ছে । জ্বিন ছেড়ে যাচ্ছে। ”

অবশেষে আমি হাত নামাতে পেরে বাঁচি :P । আমার এই অবস্থা দেখে MM রুম থেকে বের হয়ে যায় । আর আমি উঠে বসি ,আমারে দেখে অর্নব বলে দোস্ত তুই ঠিক আছোছ ?? আমার কেন জানি ঘাড়ে ব্যথা করতেছে ।

আমি লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম অর্ণবের ঘাড়ে কামড়ে দাগ । অর্ণব নিজেই নিজের ঘাড় কামড়িয়েছে তা বুঝার জন্যে শার্লক হোমস হওয়া লাগে না । তবে নিজের ঘাড় নিজে কামড়ানো কঠিন কাজ । :P এর পরে আবার ভূতের গল্প শুরু ,কিছুক্ষনের মাঝেই MM আবারও আমার রুমে হাজির ।

আমাদের গল্পের টপিক তখন বাহিরে কি ডাকছে ? বাতাস বন্ধ কেন ? আনন্দপুরের লাইট এত কম কেন আজকে । উদ্ভট । যে যা পারে আর কি ।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে MM মৃগী রোগির মত কাঁপতে কাঁপতে বিছানা থেকে পড়ে গেল । কিছুক্ষন কাঁপার পর মুখ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে সাদা ফ্যানা বের হওয়া শুরু হল তাঁর । তখন বুঝি নি কিভাবে কি হয়েছিল কিন্তু পরে বুঝেছিলাম ,রুম থেকে বের হয়ে মুখে টুথপেস্ট গুলিয়ে আবার রুমে এসে চুপচাপ বসে ছিল MM . মোটামুটি রাত আড়াইটার পরে সবাই যে যার রুমে চলে যায় ।

আমার আর অর্ণবের যন্ত্রণা শুরু হয় তখন থেকে । সেই রাতের পরের দিন শ্রাবণ একেবারে রাতে ডোর্মে ঢুকেছিল । সারাদিনে একবারও ভয়ে ডোর্মে ঢুকে নি । আর রাতে ঘুমালে কিছুক্ষন পর পর “তোরাব তোরাব,অর্ণব অর্ণব ” ডাকা শুরু করে দিত,খুবই করুণ গলায় । এমন ভাবে ডাকতো যেন ভয়ংকর কিছু একটা হয়েছে । আমি ঘুম ভেঙ্গে দৌড়ে গিয়ে বলতাম “দোস্ত কি হইছে ??” । আর যে উত্তর দিত তা শুনে প্রত্যেক বার মনে হত থাপ্ড়িয়ে দাঁত ফালায়ে দেয় । এবার বলে পানি খাব ,অথচ বিছানা থেকে নিচে হাত বাড়ালেই পানি পাওয়া যাবে বোতলে । আরেকদিন বলে দোস্ত বাতাস হচ্ছে না কেন ??জানালার পর্দা সরায়ে দে ইত্যাদি ইত্যাদি 


শ্রাবণ ভয়ে বিছানা পালটিয়ে অর্নবের বিছানায় থাকা শুরু করে । আরেকদিনের কথা খুব মনে পড়ে । আমি ঘুমিয়ে আছি । হটাৎ শুনি “তোরাব তোরাব ” করে শ্রাবণ ডাকছে । আমি দৌড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে লাইট জ্বালিয়ে শ্রাবনের বিছানার কাছে যেয়ে বসি । বিছানায় উঠে বসে শ্রাবণ আমাকে বলেছিল “দোস্ত শরীর চুলাকায় ।” শ্রাবণের কপাল ভালো মাইর দেয় নাই সে দিন । পিছন থেকে অর্ণব বলে “বইয়া বইয়া শরীর চুলাকানি দেখ ।” আর শ্রাবণ রাতে যেন ভয় না পাই তার জন্যে সব রকমের দোয়াদুরুতের ব্যবস্থা করতো আমার বন্ধু রেদোয়ান ।


ঐ দিনের পরবর্তি তিন রাত কত যে কষ্টের মাধ্যমে গিয়েছিল আমার আর অর্ণবের, তা আল্লাহ ভালো জানে । অবশ্য আমাদের কিছু করার ছিল না । স্যারের কাছে ব্যপারটা গেলে আমরা সবাই সমস্যায় পড়তাম । তাই বাধ্য হয়েই সহ্য করেছিলাম এই যন্ত্রনা । না পারি জ্বলতে না পারি শইতে ,অবস্থা আর কি । অবশ্য তাঁতে আমরা থেমে থাকিনি । আরও দুই দিন গন্ধরাজে ভূতের উপদ্রব হয়েছিল :P


দ্বিতীয় যে দিন ভয় দেখায় তা ছিল আমার আর অর্ণবের মাস্টারপ্ল্যান । ঠিক করি আমি রাতে উইড খাওয়ার অভিনয় করবো ।(জীবনে কোন দিন চোখে দেখিনি এইটা জিনিষ,আর খাওয়া তো দুরের কথা ।) এই খানে একটি কথা বলে রাখা ভালো আমাদের তিন রুমমেটেরই উইড নিয়ে কোন অভিজ্ঞতা নাই ,খেলে কি হয় বা কি করে মানুষ তাও জানা নাই । আমি এই জন্যে সেফ সাইডে ছিলাম ,শ্রাবণ বুঝবে না তাই।

সেই প্ল্যান মোতাবেক আমি রাত ১১ টার দিকে পাঁচ তলায় উঠে যায় আমার বন্ধু রেদোয়ানের কাছে । ওর সাথে ঘন্টা খানেক গল্প গুজব করে নিচে নেমে আসি । আর দরজা খুলেই ধাম করে পড়ে যায় শ্রাবণের খাটে । টিভিতে মাতাল যে ভাবে অভিনয় করে সেই ভাবে অভিনয় শুরু করি । আমি মুখ বালিশে চাপিয়ে রেখে শুয়ে পড়ি আর অর্নব শ্রাবণের কথা শুনি ।


শ্রাবণ অর্নবকে বলছে দোস্ত “ঠিক হইবো এখন এই হালায় ??”

অর্ণব – সারা রাত লাগবে । আর কথা কইস না । প্রথম প্রথম গাঁজা খাইছে ,রাইগা গেলে পরে ধরে পিডায়বো ।

শ্রাবণ – হালার যে দামড়া । (আমি মোটা মানুষ)


তারপরে ওরা দুইজন মোবাইলে মেসেজিং শুরু করে । চার হাত দূরে থেকে একজন আরেকজনরে মেসেজ দেয় । আমি ওদের কান্ড দেখি আর বালিশে মুখ গুঁজে হাসি । কিছুক্ষন পরে অর্ণব এসে আমারে ডেকে বলছে –

“দোস্ত তোর কি হইছে ?”

আমি প্রচন্ড রেগে গলা বসিয়ে বলেছিলাম – আমার কিছু হয় নাই । তখন অর্নব বলে বসে – “দোস্ত আমি তোর নামে কিছু বলি নাই,(শ্রাবণের দিকে লক্ষ্য করে) এই পোলাটা তোরে নিয়ে বাজে কথা বলছে ।”

আর শ্রাবণ অসহায়ের মত অর্নবের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুটে বলে

-দোস্ত এইটা তুই কি করলি ??

এর পরে শ্রাবণ ঘর থেকে বের হয়ে যায় ,আমিও কিছুক্ষন পরে রুম থেকে বের হয়ে যায় । করিডরে আমাকে দেখে শ্রাবণ স্টিলের মত হয়ে যায় । আমি একধাপ দেয় ,আমারে দেখে শ্রাবণও পিছের দিকে একধাপ দেয় । লিখে আসলে বুঝানো মুশকিল ব্যপারটা । প্রচণ্ড হাস্যকর এবং মজার ।


পরেরদিন আমাকে রেদোয়ান এসে বলে

-দোস্ত কাল শ্রাবণ এসে আমারে কি বলে জানস ?? তুই নাকি গাঞ্জা খেয়ে কাল রাতে আকাম করছোছ । আমি তো অবাক ,১২ টা পর্যন্ত তো তুই আমার লগেই আছিলি ,তুই আবার গাঞ্জা খাইলি কই ? আর গাঞ্জা পাইলিই বা কেমনে ??

টার্কের তিন মাসের জীবনের বাকি দুইটা ভূতের উপদ্রোবের গল্প অন্য কোন এক স্মৃতি কথনে ,আজকের পর্ব এখানেই শেষ ।

Powered by Froala Editor