প্রবন্ধ

ঈদ আসে ... ইতিহাসের গল্প দীর্ঘ হয় ।।

Jul 22, 2014

দেখতে দেখতে রমজানের দিন গুলি ফুরিয়ে যাচ্ছে । এভাবে প্রত্যেক বছর রমজান আসে এবং একসময় চলে যায় । দেখতে দেখতে জীবনের ২১ টি রমজান মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে । দিন চলে যায় ,কিছু বুঝে উঠার আগেই । সময় গুলিও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায় । ছোট বেলার সময় গুলিকে খুব বেশি মনে পড়ে । আমি গ্রামের ছেলে ,বাংলাদেশের একটি ছোট গ্রামের হাজারও ছেলের মত আমার কাছে রোজার ঈদ আসতো একটি নতুন জামা কিংবা নতুন পাঞ্জাবির আশা নিয়ে । ২০০২ সালে ঢাকায় পাড়ি জমায় আমি ,সহজ সরল জীবন ধীরে ধীরে ব্যস্ততার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় । “ছোট ঈদ”কে ঢাকার মানুষের মত “রোজার ঈদ” নামে ডাকতে শিখি এবং “বড় ঈদ” কে কুরবানি । ঢাকা আসার পরে ভাবতাম ঢাকার মানুষগুলি উচ্চ শিক্ষিত এবং আধুনিক ,তাদের অনুকরণই হয়তো জীবনের পাথেয়,তাই শরীরের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করে গেছি এই ঢাকার মানুষের মত মানুষ হতে । সবই করেছি ,হয়েছি এক উচ্চ বিত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তবুও কেন জানি অনেক কিছুই শুন্য । ভিত্তি ছাড়া উচা উচা আকাশ ছোঁয়া বাড়ি । ঢাকার আধুনিকতার সাথে মিশে যেতে যেতে এখন না হতে পেরেছি ঢাকাইয়া ,না গাঁইয়া । এখন ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় সুযোগ হলে ভাবি পাওয়া না পাওয়ার হিশাব নিকাশে হয়তো হারিয়ে ফেলেছি অনেক,চিরতরে একে বারে । মাঝে মাঝে পরভাতে ( ঢাকায় এসে ডাকতে শিখেছি সেহরি ) খেতে উঠলে ছোট বেলার স্মৃতি বারবার মনে পড়ে । ঘুম থেকে ডেকে তুলে দিত বাড়ির লোকজন,যদিও জানে তখন না খেয়ে সারাদিন থাকার মত বয়স আমার হয়নি । পরভাতে ভাত খেয়ে দুপুর হওয়ার আগেই শুরু করতাম চিল্লাচিল্লি ,এক বার খাওয়ার জন্যে গলা ফাটানো চিৎকার । দুপুরে সবাই কে দেখিয়ে দেখিয়ে ভাত খেতাম ,সবাইকে ভাত খাওয়ার লোভ দেখানোর চেষ্টা করতাম,বাড়ির লোকজনও আমার থেকে জোর করে খেতে চাইতো ,আমি দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে ভাত খেতাম কাওকে না দেবার জন্যে । অল্প বয়সে বড়ভাই-বোনদের এই সব দুষ্টুমি সত্যি আনন্দের ছিল,আমার খাবারের প্লেট থেকে মিছিমিছি খাবার তুলে নেওয়ার অভিনয় বড় বেশী জীবন্ত ছিল ,আমি কখনই বুঝতে পারতাম নাহ,এই সবই ছলচাতুরী ,আমার সাথে একটু মজা করার পাথেয় । কতয় না ভাল ছিল দিনগুলি । অবুঝ মনে দুনিয়ার এত ছলচাতুরী ছিল নাহ ,জীবন যে এক সর্বনাশা যুদ্ধ তা তখন আমি বুঝতাম নাহ । এখনো দুপুর হলে ইচ্ছে করে আমার সেই ভাইবোন গুলি আসুক ,আমার প্লেট থেকে তুলি নিক ভাত কিংবা মাংসের টুকরা । হয় না ,ভাবনা শুধু বন্দী প্রাচীরের দেয়ালে । ভাই-বোনগুলি আমার জীবিত থেকে মৃত ,এই আধুনিক যোগাযোগের বিশ্বে ভাইবোনগুলি আমার যোগাযোগের সীমানার বাহিরে । সারা দিনে কতবার বন্ধু-বান্ধবী কিংবা প্রিয়তমার মুঠোফোনে ফোন দেয়,তবুও একবারও ভাই-বোনগুলিকে দিতে মনে পড়ে না,একটু ইচ্ছেও জাগে না ।। আশ্চর্য হয়ে ভাবি কেন ?? তারা তো আমার রক্তের মানুষ । তবুও এমন কেন ?? আমি জানি না,আর কেন জানি জানতেও ইচ্ছে করে না । জানার স্পৃহাও চলে যায় আমার , ক্লাসের পর ক্লাস ,পরীক্ষার পরে পরীক্ষা,সেমিনারের পরে সেমিনার সবই আমার মনে থাকে তবুও অন্ধকার ঘরে দিন শেষে আমি একায় বসে থাকি । ভাই-বোন গুলি ব্যস্ত তাদের সংসার নিয়ে আর আমি আছি আমার ব্যস্ত জীবন নিয়ে । তাইলে চাইলেও সব কিছু আগের মত হবে নাহ,আর হবার কথাও না । রাত শেষ হতে চলেছে,বাহিরে গুন গুন আওয়াজ আসছে । মসজিদ থেকে হুজুর তার কন্ঠের ধ্বনীতে মুখরিত করছে । “আপনার উঠুন, ভাত খাওয়ার সময় হয়েছে ” ল্যাপটপ ছেড়ে এইবার আমি উঠে পড়ব । সেহরি করব । আরেকটি রোজার শুরু হবে । এভাবেই দিন পার হয়ে যাচ্ছে । আর মাত্র পনের দিন পরে গ্রামে যাব আবারও সেই ভাইবোনদের দেখতে পারব । একটু হাসাহাসি, একটু মনের কথা,না বলা হাজারও কথার মাঝে একটু কথা না হয় বলেই বলে দিব । আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় জানতেন আমরা একদিন নিজেদের আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলব,তাই তিনি রহমত হিশেবে দিয়েছেন দুই ঈদ, যেন আমরা নীড়ে ফিরি আমাদের বাপ দাদার ভিটেতে । নিজেদের আত্বশিকড় যেখানে গাঁথা আছে ।

Powered by Froala Editor